রমজান মাসে ৩০ দিন রোজা রাখার ফজিলত ও দলিল

 রমজান মাসে ৩০ দিন রোজা রাখার ফজিলত ও দলিল

রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। এই মাসে পুরো ৩০ দিন রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। নিচে বিস্তারিত দলিলসহ আলোচনা করা হলো:  

১. কুরআনে রোজার ফরজ হওয়ার নির্দেশ

আল্লাহ তাআলা বলেন:  

রমজান মাস হলো এমন মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে; যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন... সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাস পাবে, সে যেন এই মাসে রোজা রাখে.  

(সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

এই আয়াত দ্বারা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার প্রমাণ মিলে। পুরো মাস রোজা রাখা ঈমানদারের জন্য অবশ্য কর্তব্য।

২. রোজার অশেষ সওয়াব সম্পর্কে হাদিস  

গুনাহ মাফ ও জান্নাত লাভ:  

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:  

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখে, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।  

(সহিহ বুখারি: ৩৮, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)

জান্নাতের বিশেষ দরজা "রাইয়ান"

নবী (ﷺ) বলেন:  

জান্নাতে 'রাইয়ান' নামক একটি দরজা রয়েছে, যার মাধ্যমে কেবল রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। 

(সহিহ বুখারি: ১৮৯৬, সহিহ মুসলিম: ১১৫২)

৩. লাইলাতুল কদরের ফজিলত

রমজানের শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদর (মহিমান্বিত রাত) রয়েছে। এই রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করলে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন:  

লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।

(সুরা আল-কদর, আয়াত: ৩)

৪. আত্মসংযম ও তাকওয়া অর্জন  

রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন। আল্লাহ বলেন:  

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।  

(সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

৫. সমাজিক ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা  

দান-খয়রাত বৃদ্ধি রমজানে সাদাকাতুল ফিতর ও জাকাত প্রদানের মাধ্যমে গরিবদের সাহায্য করা হয়।  

শারীরিক সুস্থতা: রাসুল (ﷺ) বলেছেন, "রোজা রাখো, সুস্থ থাকবে।" (সুনান ইবনে মাজাহ: ১৬৯০)  

আত্মশুদ্ধি: রোজা মানুষের অভ্যন্তরীণ কুপ্রবৃত্তি দমন করে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে।

৬. বিশেষ সতর্কতা  

নিয়তের শুদ্ধতা রোজা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাখতে হবে, কোনো প্রকার প্রদর্শনেচ্ছা ছাড়া।  

গীবত ও মিথ্যা পরিহার রাসুল (ﷺ) বলেন, "যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ ত্যাগ করে না, তার শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণা সহ্য করার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।" (সহিহ বুখারি: ১৯০৩)

৭. রোজা ভঙ্গকারী কাজ থেকে সতর্কতা

ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ। তবে ভুলবশত খেলে বা পান করলে রোজা পুনরায় রাখতে হবে এবং তওবা করতে হবে। (সুরা আল-বাকারা: ১৮৭)

উপসংহার  

রমজানের ৩০টি রোজা পালন করা ঈমানি দায়িত্ব ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। কুরআন-সুন্নাহর দলিল অনুযায়ী, এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত, দান ও আত্মসমালোচনার জন্য উৎসর্গ করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিকভাবে রোজা রাখার তাওফিক দিন। আমিন!