যেসব কারণে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে

 যেসব কারণে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে

শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জি হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এটি তাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিসক্রিয় প্রতিক্রিয়া যা নির্দিষ্ট উপাদানের সংস্পর্শে এসে ঘটে। বিভিন্ন কারণ অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে, যা তাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

শিশুদের অ্যালার্জির কারণসমূহ

১. খাবারজনিত অ্যালার্জি

গরুর দুধ, ডিম, বাদাম, সয়া, গম, মাছ এবং শেলফিশের মতো খাবার শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির অন্যতম কারণ। এসব খাবার খাওয়ার পর ত্বকে র‍্যাশ, পেটে ব্যথা, বমি, বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

২. ধুলাবালির কারণে অ্যালার্জি 

 ঘরের ধুলা, ধুলোর মাইট, এবং পুরনো ফার্নিচার থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। এটি সাধারণত শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, এবং নাক বন্ধ হওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করে।

৩. ফুলের রেণু 

বাইরের বাতাসে থাকা ফুলের রেণু শিশুদের শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা এবং চোখে চুলকানি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে এটি বেশি দেখা যায়।

৪. পোষা প্রাণীর লোম   

 পোষা প্রাণীর লোম, লালা, এবং ত্বকের মৃত কোষ শিশুদের ত্বকে এবং শ্বাসনালীতে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।  

৫. খাবার সংরক্ষণে ব্যবহৃত রাসায়নিক 

 বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত রাসায়নিক সংরক্ষণকারী বা রঙিন উপাদান অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।  এটি ত্বকে র‍্যাশ এবং পেটের সমস্যা ঘটাতে পারে।  

৬. ছত্রাক বা ফাঙ্গাস  

 বাসার ভেজা ও আর্দ্র স্থানে ছত্রাক জন্মায়, যা শিশুদের অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।  এটি শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে পানি পড়া, এবং চোখ লাল করার কারণ হতে পারে।  

৭. গন্ধযুক্ত উপাদান 

 সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, এবং এয়ার ফ্রেশনারে থাকা কেমিক্যাল শিশুর ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।  

৮. পোশাক এবং বিছানার কাপড়  

 পোশাক বা বিছানার কাপড়ে ব্যবহৃত ডিটারজেন্টের রাসায়নিক শিশুদের ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।  

৯. ঠান্ডা ও তাপমাত্রার পরিবর্তন  

 অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম আবহাওয়ার কারণে কিছু শিশুদের ত্বকে র‍্যাশ বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।  

১০. ওষুধজনিত অ্যালার্জি  

কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিবায়োটিক (পেনিসিলিন), পেইনকিলার ইত্যাদি অ্যালার্জি ঘটাতে পারে।  এর ফলে ত্বকের র‍্যাশ, ফোলা, বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।  

শিশুদের অ্যালার্জি প্রতিরোধের উপায় 

১. খাবারে সতর্কতা 

 শিশুদের নতুন কোনো খাবার খাওয়ানোর সময় সতর্ক থাকুন। অ্যালার্জিজনিত খাবার এড়িয়ে চলুন।  

২. ঘর পরিষ্কার রাখুন 

 নিয়মিত ঘর মুছে পরিষ্কার করুন। ধুলাবালি এবং মাইট কমাতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করুন।  

৩. পোষা প্রাণীর যত্ন

 পোষা প্রাণী পরিষ্কার রাখুন এবং তাদের শোবার জায়গা আলাদা রাখুন।  

৪. ছত্রাক রোধ করুন  

 আর্দ্রতা কমাতে ঘরের ভেজা স্থানগুলো শুকনো রাখুন। ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।  

৫. হাইপোঅ্যালার্জেনিক পণ্য ব্যবহার করুন  

 শিশুদের জন্য হাইপোঅ্যালার্জেনিক সাবান, লোশন, এবং ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন।  

৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন  

 কোনো অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অ্যালার্জি পরীক্ষা করিয়ে সঠিক কারণ নির্ণয় করুন।  

উপসংহার  

শিশুদের অ্যালার্জি হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শিশুর অ্যালার্জির কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা এড়িয়ে চললে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করা সহজ হবে।