গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে । বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে করনীয়

Siam 😎

27 Dec, 2023

প্রিয় পাঠক , আপনি কি গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে ও বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে করনীয় সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে আজকের এই ব্লগ পোস্টটি আপনার জন্য। তো চলুন আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে শুরু করা যাক আমাদের আলোচনার মূল আলোচ্য বিষয় গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত।

আমার আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে ও বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত। এজন্য আজকের আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।

গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে

পৃথিবীর সব থেকে পুরাতন একটি শারীরিক পদ্ধতি হলো গর্ভধারণ করা। গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে এটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। অনেকে মনে করে গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের ডান পাশে থাকে। আবার অনেকে মনে করে গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের বাম পাশে থাকে।

চিকিৎসা বিজ্ঞান কর্তৃক প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে বলা হয়েছে গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের মাঝামাঝি অবস্থায় থাকে। এই আর্টিকেল স্পষ্টভাবে বলা রয়েছে গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের যে কোন পাশে থাকতে পারে এটি গর্ভবতী নারীর চলাফেরার ওপরে নির্ভরশীল। গর্ভাবস্থায় নারী যদি ডান পাশ হয়ে শুয়ে থাকে তাহলে ছেলে বাচ্চা ডানে থাকে আর যদি বাম পাশে পাশ হয়ে শুয়ে থাকে তাহলে ছেলে বাচ্চা বাম পাশে থাকে।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চার ওজন কত হলে সিজার করা যায়

গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে এক্ষেত্রে ছেলে বাচ্চার পজিশনের উপরে নির্ভর করে থাকে। যেহেতু বাচ্চা প্রায় চার ধরনের পজিশনে গর্ভাবস্থায় পেটে থাকে এজন্য ছেলে বাচ্চার পজিশনের জন্য গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে তা নির্ণয় করা সহজলভ্য হয়ে থাকে। এজন্য ছেলে বাচ্চা পেটের মধ্যে কোন পজিশনে রয়েছে এটি আগে নির্ণয় করতে হয়।

বাচ্চা যদি এন্টেরিয়ার পেছনে থাকে তাহলে এটি সবচেয়ে নিরাপদ ও সুবিধা জনক পজিশন। কারণ এই পজিশনে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে ও পা উপরের দিকে থাকে ফলশ্রুতিতে বাচ্চা পেটের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করে। এক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি করার সবথেকে সুবিধাজনক হয়ে থাকে এবং এতে টাকা পয়সা কম খরচ হয়।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় গর্ভবতী নারীর ঘুমের পজিশনের উপরে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে তা নির্ভর করে থাকে। এজন্য গর্ভবতী নারীদের সব সময় সোজাসুজি হয়ে অর্থাৎ চিৎ হয়ে ঘুমানোর নির্দেশ দিয়ে থাকে অভিজ্ঞ চিকিৎসা করা। সেট হয়ে ঘুমালে গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের মাঝামাঝি স্থানে থাকে।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের নিচের দিকে অর্থাৎ বাচ্চার মাথা গর্ভবতী নারীর যোনির দিকে এবং বাচ্চার পা এবং সমস্ত শরীর গর্ভবতী নারীর বুকের দিকে। সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় বাচ্চার বয়স যখন ৬ মাস হয় তখন। কারণ ৫ থেকে ৬ মাস পরে বাচ্চার শারীরিক গঠন সম্পন্ন হয় ফলে তখন বাচ্চা নড়াচড়া শুরু করে। এ সম্পর্কে আরো অনেক কুসংস্কার রয়েছে।

আসল তথ্য হল বৈজ্ঞানিক ভিত্তি মতে গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটে যেকোনো পাশে থাকতে পারে এটা কোন আলোচিত বিষয় নয়। গর্ভবতী নারীর উপর এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। গ্রামের অনেক মুরব্বি রয়েছে যাদের মতানুসারে গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে এর ওপরে বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণরূপে এনালগ যুগের কুসংস্কার।

মায়ের পেটে সন্তান কিভাবে থাকে

মায়ের পেটে সন্তান কিভাবে থাকে তা হল মায়ের পেটে সন্তান থাকে উলম্বভাবে। সন্তানের মাথা থাকে মায়ের যোনির দিকে এবং সন্তানের পা এবং সমস্ত শরীর থাকে মায়ের পেটের পা বুকের দিকে। এটি হলো মায়ের পেটে সন্তান থাকার আদর্শ পজিশন। বিভিন্ন সময়ে এই পজিশন বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয়। এই সঠিক পজিশন না থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

মায়ের পেটে সন্তান বিভিন্ন ভাবে থাকতে পারে এটি বাচ্চার পজিশনের উপরে নির্ভর করে থাকে। বাচ্চার মাথা নিচের দিকে এবং পা উপরের দিকে থাকতে পারে, বাচ্চার মাথা নিচের দিকে এবং মুখ হালকা ঘোরানো থাকতে পারে, বাচ্চার পা নিচের দিকে এবং বাচ্চার মাথা উপরের দিকে থাকতে পারে, বাচ্চার পা এবং মাথা আড়ারি ভাবে থাকতে পারে।

যদি সন্তানের মাথা মায়ের যোনির দিকে এবং সন্তানের পা মায়ের পেটর দিকে থাকে অর্থাৎ বাচ্চার পজিশন যদি সঠিক থাকে তাহলে নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। আর যদি বাচ্চার অবস্থান উল্টানো অবস্থায় থাকে অর্থাৎ বাচ্চার মাথা মায়ের বুক পা পিঠের দিকে এবং বাচ্চার পা মায়ের যোনির দিকে থাকে তাহলে নরমাল ডেলিভারি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বাচ্চার পজিশন বোঝার উপায়

বাচ্চার পজিশন বোঝার উপায় হল বাচ্চার বয়স যখন ৫ থেকে ৬ মাস হবে তখন বাচ্চার নড়াচড়া ব্যাপকভাবে খেয়াল করতে হবে। বাচ্চা শারীরিক গঠন তৈরি হতে পারে ৫ থেকে ৬ মাস সময় লেগে যায়। সেক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ মাস পরে বাচ্চার নড়াচড়া পরিলক্ষন করলে বাচ্চার অবস্থান বোঝা যায়। একটি বাচ্চার পজিশন বোঝার সঠিক উপায়।

বাচ্চার পজিশন বোঝার সবথেকে সহজ উপায় হলো বাচ্চার পজিশন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। বাচ্চার মাথা নিচের দিকে এবং যদি পা উপরের দিকে থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি এন্টেরিয়ার পজিশন।

বাচ্চার পা নিচের দিকে এবং মাথা যদি হালকা ঘোরানো থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি পস্টেরিয়র পজিশন।

বাচ্চার পা নিচের দিকে এবং যদি মাথা উপরের দিকে থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি ব্রিজ পজিশন পজিশন ‌

বাচ্চা যদি পেটের আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে অর্থাৎ মাথা এক পাশে এবং মাথার প্রায় অপর পাশে পা থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে এটি ট্রান্সভার্স লাই পজিশন।

যেহেতু বাচ্চার পা মায়ের যোনির দিকে থাকে তাহলে বাচ্চার পজিশন যদি সঠিক হয় তাহলে যখন বাচ্চা মায়ের পেটে লাথি মারবে তখন সে লাথির ভার যোনির দিকে আসবে। আর যদি বাচ্চার পজিশন সঠিক না থাকে তাহলে বাচ্চা যখন মায়ের পেটে লাথি মারবে তখন সেই লাথির ভার মায়ের বুকের বা পিঠের দিকে অগ্রসর ভাবে সম্প্রসারিত হবে।

নাভি কেমন থাকলে কি হয়

নাভি যদি অতিভুজ আকারে থাকে তাহলে ছেলে সন্তান হয়। নাভি যদি অভিলম্ব আকারে থাকে তাহলে মেয়ে সন্তান হয়। নাভি যদি কুলম্ব আকারে থাকে তাহলে ছেলে অথবা মেয়ে দুইটা হওয়ারই সম্ভাবনা থাকে। নাভি যদি কেলাসিত অবস্থায় থাকে তাহলে হিজরা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নাভি যদি ট্রাপিজিয়াম আকারে থাকে তাহলে গর্বের সন্তান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

উপরোক্তাদের সকল তথ্য দেওয়া হয়েছে এগুলো সবই কুসংস্কার অর্থাৎ মানুষের মনগড়া কথা। উপরের যে সকল তথ্য প্রদান করা হয়েছে এগুলো সবই বিজ্ঞানের যুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক। উপরের সকল তথ্য গ্রামের যারা মুরুব্বী রয়েছে যারা আদি যুগের মানুষ অর্থাৎ যারা ডিজিটাল যুগের বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করে না তাদের যুক্তি মধ্যে উপরের তথ্যগুলো সঠিক।

কত মাসে পেট বড় হয়

ভ্রূণ তৈরি হওয়ার প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস পরেই শিশুর শারীরিক গঠন সংসম্পূর্ণতা পায়। অর্থাৎ তখন শারীরিকভাবে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে থাকে। অর্থাৎ ৫ থেকে ৬ মাসে পেট বড় হয়। পেট যখন বড় হয় তখন বুঝে নিতে হবে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। এ সময় বিভিন্ন পুষ্টি সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি ও ভিটামিন বেশি বেশি খেতে হয়।

আরো পড়ুনঃ নরমেন্স ট্যাবলেট খাওয়া কালিন সহবাস করলে কি বাচ্চা হয়

কত মাসের পেট বড় হয় এটি মূলত সন্তানের উপরে নির্ভরশীল এবং মায়ের স্বাস্থ্যের উপরে নির্ভরশীল। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি জমজ বাচ্চা হয় তাহলে দুই থেকে তিন মাসে পেট বড় হয়। কারণ পেটে যেহেতু জমজ বাচ্চা রয়েছে সেহেতু দ্বিগুণ কম সময় অর্থাৎ দুই থেকে তিন মাসে পেট বড় হয়। আশা করি আপনার উত্তরটি সংশ্লিষ্ট হয়েছে।

বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে করনীয়

বাচ্চার পজিশন ৩৭ সপ্তাহ পাঁচ মাস এর আগের যেকোনো সময় বাচ্চার পজিশন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকতে পারে। কারণ তখন বাচ্চার শারীরিক গঠন স্বয়ংসম্পূর্ণতা পায় না ফলে সে সময় বাচ্চার পজিশন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ৩৭ সপ্তাহ বা ৫ মাস পরে বাচ্চার পজিশন ঠিক একই রকম হয়ে থাকা স্বাভাবিক। এক রকম না থাকলে সেটি উল্টো হয়ে যায়।

বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে করণীয় এটা জানার পূর্বে আমাদের আগে জানতে হবে বাচ্চা মূলত কত ধরনের পজিশনে থাকতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে বাচ্চা মূলত ৪ ধরনের পজিশনে থাকে।

এন্টেরিয়ার পজিশ

পস্টেরিয়র পজিশন

ব্রিজ পজিশন পজিশন

ট্রান্সভার্স লাই পজিশন

উপরোক্ত এই চারটি পজিশনের মধ্যে সবথেকে নিরাপদ ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে পজিশনটি বেশি পরিদর্শিত হয় সেটি হলো এন্টেরিয়ার পজিশন। এই পজিশনটি নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে অত্যাধিক সুবিধা জনক। সবারই মনে আকাঙ্ক্ষা থাকে এন্টেরিয়ার পজিশন যাতে তারা লাভ করতে পারে। কারণ এন্টেরিয়ার পজিশনে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে এবং পা উপরের দিকে থাকে।

আরো পড়ুনঃ ভেরিকোসিল হলে কি বাচ্চা হবে না । ভেরিকোসিল সারতে কতদিন লাগে

পস্টেরিয়র পজিশনটি হল এন্টেরিয়ার পজিশনের পরে সব থেকে নিরাপদ পজিশন। এটি দ্বিতীয় নিরাপদ পজিশন। এই পস্টেরিয়র পজিশনে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকে কিন্তু বাচ্চার মুখ মায়ের পেটের দিকে ঘোরানো থাকে। অর্থাৎ এন্টেরিয়ার পজিশনের সাথে পস্টেরিয়র পজিশনের মূল পার্থক্য হল বাচ্চার মুখ এর।

পস্টেরিয়র পজিশনের পরে সব থেকে নিরাপদ পজিশন হলো ব্রিজ পজিশন। এটি তৃতীয় নিরাপদ পজিশন। এই ব্রিজ পজিশনে বাচ্চার মাথা উপরের দিকে এবং বাচ্চার পা নিচের দিকে ঘুরানো থাকে। এন্টেরিয়ার পজিশনের সাথে এর ব্রিজ পজিশনের মূল পার্থক্য হল এটি এন্টেরিয়ার পজিশনের ঠিক উল্টা ভাবে থাকে।

সর্বশেষ পজিশনটি হল ট্রান্সভার্স লাই পজিশন। এটি সবথেকে অনিরাপদ পজিশন। এই পজিশনে নরমাল ডেলিভারি তো দূরে থাক সিজার ডেলিভারিও করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ এই পজিশনে বাচ্চা মায়ের পেটে ঠিক আড়াআড়ি ভাবে থাকে যার ফলশ্রুতিতে সিজার বা নরমাল ডেলিভারি প্রায় দুইটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। আশা করি বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে করনীয় সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।

শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় ছেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে ও বাচ্চার পজিশন উল্টো হলে করনীয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আশা করি আজকের আমার এই পোষ্টটি আপনাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আজকের পোষ্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর এরকম সব গুরুত্বপূর্ণ, তথ্যমূলক ও জীবন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে www.proudwin.com এর সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

স্বাস্থ্য